দিদি- নারে ভাই , আমি তোকে বলেছি জানতে পারলে ও হয়ত তোকে আর থাকতে দেবে না এখানে। তুই প্লিজ কাউকে কিছু বলিস না।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। এরপর কদিন কেটে গেল।আমি আর কিছু বলিনি এই নিয়ে।দিদিকে দেখতাম কেমন মনমরা হয়ে আছে সারাক্ষণ ,কিছুতেই যেন মন নেই। আমার খুব অসহায় লাগতো দিদিকে দেখে কিন্তু কিছু করতে পারতাম না । একদিন আর না থাকতে পেরে দিদিকে বললাম,
আমি- আমার এক সহকর্মীর বউ গাইনোকোলজিস্ট , তুই চাইলে ওনার সাতে কথা বলতে পারিস। উনি তোকে সাজেশান দিতে পারবেন কি করা যায়। তুই যদি রাজি থাকিস বলিস আমি নিয়ে যাব তোকে।
দিদি- আচ্ছা আমি ভেবে জানাবো রে তোকে।
কদিন পর দিদি রাজি হল যেতে।কিন্তু সর্ত হল জামাইবাবু জানবে যে আমরা শপিং করতে গেছি।
সেইমত আমরা দুজনে ডাক্তারের কাছে গেলাম। আমি বাইরে ওয়েট করলাম দিদি কথা বলে এল।
আমি- কিরে কি বললি- বলল আমার কিছু টেস্ট আর একবার করিয়ে নিতে আর তোর জামাইবাবু যদি নিজে না আসতে চায় তাহলে স্পা * /র্ম স্যাম্পল কালেক্ট করে আমি যদি টেস্ট করাই তাহলেও হবে।
আমি- ঠিক আছে জামাইবাবুকে নাহয় পরে বুঝিয়ে বলিস। তোর টেস্ট গুলো কি আজ করা যাবে বলল?
দিদি- হ্যাঁরে আজই করিয়ে নেব। বারবার তো আর অজুহাত দিয়ে বেরোনো হবে না।এখানে কাছেই নাকি টেস্ট হয়।
আমি- ঠিক আছে চল তাহলে।
দিদি- যাচ্ছিস যখন তোর স্পা * /র্ম কাউন্ট ও টেস্ট করিয়ে নিবি চল
আমি- ধুস! আমি করাতে যাব কেন ? আমার কি বিয়ে হয়েছে নাকি?
দিদি- আচ্ছা আজ না হয় হয়নি , কাল তো হবে। আগে থেকে জেনে রাখতে ক্ষতি কি ? তুই তো ওপেন মাইন্ডেড , তোর জামাইবাবুর মত তো নয়।
আমি- ঠিক আছে আমি করে নেব কিন্তু একটা শর্তে। আমার রিপোর্ট আমি জানবো, তোকে বলব না। ওকে?
দিদি- ওকে।
দিদি কি ভেবে হঠাৎ আমায় টেস্ট করাতে বলল জানিনা , একটু অস্বস্তিই হচ্ছিলো যাই হোক টেস্ট করিয়ে নিলাম। দিদিও দিদির টেস্ট গুলো করিয়ে নিল।
দিদি – হ্যাঁরে রিপোর্ট কিন্তু তুই নিতে আসবি, আমি আসতে পারবো না। তোর আর আমার রিপোর্ট একসাতেই বিল করিয়ে নিচ্ছি তুই একাই নিতে আসবে যখন
আমি- কর কিন্তু আমার টেস্ট এর টাকা আমি দেব
দিদি – আহারে লজ্জা পেয়ে গেছে আমার ভাইটা!
ঠিক আছে সে নাহয় দিবি এখন আগে চল কিছু শপিং করতে তো হবে নাকি ! ভুলে গেলি কি বলে বেরিয়েছি?
আমি – সত্যি ভুলে গেছিলাম রে সবকিছুর মাঝে, ফুল কেস খেতাম আজ !শপিং করে কোন রকমে জামাইবাবু ফেরার আগে বাড়ি ফিরলাম। দুদিন পর দিদি বলল “রিপোর্ট গুলো হয়ে গেছে তুই বিকেলে নিয়ে আসিস পারলে। আমার সব রিপোর্ট ঠিক ই আছে , বরং আগের চেয়ে ভালো আছে। তুই তোর রিপোর্ট টা রেখে আমার টা আমায় দিয়ে দিস ওকে?”
বিকেলে গিয়ে রিপোর্ট কালেক্ট করলাম । আমার রিপোর্ট খুবই ভালো। সেটা আলাদা করে বাকিটা দিদির হাতে দিলাম।
দিদি- থ্যাংক ইউ
আমি – থাক আর থ্যাংক ইউ করতে হবে না
দিদি- তোর রিপোর্ট কেমন?
আমি- ঠিক ঠাক, কাজ চলে যাবে।
দিদি- কাজ চলে যাবে কিরে ! দারুণ বল! তুই তো তোর বউকে একবারেই প্রে*গ / ন্যা*ন্ট করে দিবি!
আমি- কিসব বলছিস মুখে কিছু আটকায় না দেখছি! এক মিনিট! তুই আমার রিপোর্ট জানিস?? এরকম তো কথা ছিল না!
দিদি- সরি ভাই , আমার আইডিটা দেওয়া ছিল ওরা সব রিপোর্ট আগেই আমায় কাল রাতে মেইল করে দিয়েছে একসাতে। চিন্তা করিস না তোর হবু বউ কে বলব না আগে থেকে!
বলে দিদি চোখ মেরে দিয়ে নিজের কাজ এ চলে গেল!
সেদিনের ঘটনার পর সপ্তাহখানেক কেটে গেছে, একদিন দুপুর বেলা আমি আর দিদি খাচ্ছি দিদি বলল ,
“তোর জামাইবাবুকে রাজি করিয়েছি টেস্ট করানোর জন্য অনেক কষ্টে। আমি যে টেস্ট করিয়েছি সেগুলো ও দেখিয়েছি, তবে তুই যে ছিলিস এসব এ সেটা কিন্তু ও জানেনা ওকে?”
আমি- আমি কিছু বলব না চাপ নিসনা সে ব্যাপারে।
দিদি- হ্যাঁরে। তোর জামাইবাবুর এখন কেমন রিপোর্ট আসে দেখি, পরশু যাচ্ছি টেস্ট করাব আগে তারপর রিপোর্ট পেলে ডাক্তার দেখাব।আমি মনে মনে খুশি হলাম যে কিছু তো কাজ এগিয়েছে এদের। ৩-৪ দিন কেটে গেছে, ওরা টেস্ট করিয়েছে, রিপোর্ট দেখিয়েছে ডাক্তারকে, তারপর দেখি দিদি আবার আগের মত ঝিমিয়ে রয়েছে যেন আবার।
আমি বুঝলাম যে রিপোর্ট ভালো আসেনি। তাও একদিন সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে রিপোর্ট কেমন এল? ডাক্তার কি বলল?”
দিদি- রিপোর্ট একদম ভালো নয় রে ভাই। ওর স্পা * /র্ম কাউন্ট খুব কম। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে কিন্তু বলেছে চান্স খুব কম প্রে*গ / ন্যা*ন্ট হওয়ার। বলেছে বেটার হবে স্পা * /র্ম ব্যাংক এর সাথে যোগাযোগ করলে। ওকে তো জানিস ও এটা কিছুতেই মেনে নেবে না। জানি না রে কি হবে। আমি বোধহয় আর কোনদিন মা হতে পারবো না। আর সবাই আমাকেই কথা শোনাবে সুযোগ পেলেই।
দিদির চোখ গুলো ছলছল করছিল। আমি কি বলব বুঝতে না রে চুপচাপ ফিরে এলাম নিজের রুমে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল কিন্তু কিছু করার ছিল না।
এরপর মাস দুয়েক কেটে গেছে। দিদি একটু চুপচাপ হয়ে গেছে ,সারাক্ষণ নিজের ঘরে বা রান্নাঘরে থাকে, কথাই বলে না প্রায়। যখন একটু হাসি আসে মুখে তখন বোঝা যায় সেটার পিছনে কতটা কষ্ট চাপা আছে।
খুব খারাপ লাগতো দিদিকে দেখে।খুব আসহায় লাগতো নিজেকে,তাই ঠিক করলাম আর দিদির বাড়িতে থাকবো না। একদিন চুপ করে বসিয়ে দিদিকে বুঝিয়ে বললাম আমার মনের কথা। দিদি আচমকা ভীষণভাবে কেঁদে ফেলল!
বাংলাচটিগল্প
0 মন্তব্যসমূহ