![]() |
ঠা*সস!! করে থা*প্পড় পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেল পুরো বিয়ে বাড়ি!অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই নবনীতার দিকে।
বিয়ে বাড়ি ভর্তি মানুষ সবার দৃষ্টি এখন নবনীতার দিকে।
নবনীতা অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে। জেনো সে চোখ দিয়েই খু*ন করে ফেলবে!
থাপ্পড় খেয়ে থমথমে, গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে প্রণয় চৌধুরী। রা*গে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে, যথেষ্ট চেষ্টা করছে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার। বলা নেই কওয়া নেই, চিনেনা জানেনা অচেনা একটা মেয়ে বিনাদোষে থা*প্পড় মে*রে বসলো! তাও এভাবে তাকিয়ে সাপের মতো ফুঁসছে!!
প্রণয় গালে হাত দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকালো সবাই কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পাশ থেকে একজন ছেলে বলে উঠলো " ভাই!!"
প্রণয় হাত দিয়ে ইশারায় ছেলেটাকে থামিয়ে বলে উঠলো, ' হাউ ডেয়ার ইউ.? আপনি আমাকে থা*প্পড় কেনো মেরেছেন!.?'
ইতিমধ্যে ছেলে পক্ষ সবাই চলে এসেছে এখানে। কেউ জেনো বিশ্বাস করতে পারছে না প্রণয় চৌধুরীর গায়ে হাত তুলেছে তাও কোনো মেয়ে! প্রণয় চৌধুরী নাম শুনলেই ভয়ে সবাই চুপসে থাকে সেখানে এতো বড় সাহস কোন মেয়ের!.?
প্রণয়ের বাবা জহিরুল চৌধুরী ছেলের পাশে এসে দাঁড়ালো। ছেলের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো কোনো ঝামেলা না করতে।
(নবনীতা আজ ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে এসে ছিল। রুপা নবনীতার বেস্ট ফ্রেন্ড। রুপার পরিবারের কেউ তেমন নবনীতা কে পছন্দ করে না, তাও আজ নবনীতা রুপার শেষ কথা রাখার জন্য এসে ছিল বিয়েতে। নবনীতা এসেই প্রথম রুপার সাথে দেখা করলো। রুপাকে দেখতে পরীর মতো লাগছে, রুপার রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসবে তখনি কেউ ওর শাড়ির আঁচল ধরে টান দিল, নবনী পেছন ফিরার আগেই ওকে এক টানে পাশের রুমে নিয়ে গেল। রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার! এতো দ্রুত সব কিছু হলো নবনীতা কিছুই বুঝতে পারলো না, কি হচ্ছে!!? নবনীতা ধা*ক্কা দিয়ে সামনের মানুষটাকে দূরে সরিয়ে দিল আশেপাশে তাকিয়ে দরজা খুলবে তখনি আবার শাড়ির আঁচলে টান খেয়ে শাড়ি টান দিতে শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে গেল! বেশ পুরনো শাড়ি ছিল, শাড়ি পুরনো হলেও এটা ওর মায়ের শেষ স্মৃতি। রাগে নবনীতা দরজা খুলে বাহিরে এসে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামতেই আবারও পেছনে শাড়িতে টান পরলো এবার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে নবনীতা পেছন ফিরে থাপ্পড় বসিয়ে দিল ব্যাস এক থা*প্পড়ে বিয়ে বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।)
রুপার বাবা শফিক সাহেব এসে নবনীতার দিকে রে*গে বললো,' অল*ক্ষ্যনে মেয়ে এটা কি করলে! তোমাকে বিয়েতে আসতে কে বলেছে.? ছেলের বড় ভাইকে থা*প্পড় মে*রে আমার মেয়ের বিয়েটাই ভে*ঙে দিলে!.?
রুপার মা ত নবনীতার গায়ে হাত তুলতে চলে গেল।
প্রণয় গম্ভীর রা*গী কন্ঠে বলে উঠলো, ' থামুন! বিয়ে ভে*ঙে যাবে কেন!.? সবাই বর, বউয়ের কাছে যান বিয়ে যতো তারাতাড়ি সম্ভব শেষ করুন।'
প্রণয়ের মুখের উপর কেউ কথা বলার সাহস পেল না।
প্রণয়ের একমাত্র ছোট বোন পায়েল শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ভাইয়ের পাশে। সে ভাইয়ের রা*গ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানে। আজ নবনীতা ছেলে হলে এতোক্ষণ হসপিটাল ভর্তি থাকতো শুধু মাত্র মেয়ে বলে তাও বিয়ে বাড়ি, আজ ওর ছোট ভাইয়ের বিয়ে সেই জন্য নিজেকে শান্ত রেখেছে।
প্রণয় নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,' আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন.? জলদি সব শেষ করুন।'
প্রণয় বিয়েতে একদম আসতে চায়নি আজ ওর অফিসে অনেক বড় একটা মিটিং ছিল তাও সে ছোট ভাই আলভির কথা রাখতে এসেছে। আলভি প্রণয় ভাই বলতেই পা*গল, প্রণয় ভাইকে ছাড়া ও বিয়ে করবে সে কল্পনাও করা যাবে না যদিও এটাকে বিয়ে নয় শুধু মাত্র কোম্পানির লাভের জন্য একটা চুক্তি বললেও চলে।
আলভি যদি জানতে পারে তার ভাইয়ের গায়ে বউয়ের বান্ধবী হাত তুলেছে সাথে সাথে সে বিয়ে ভেঙে চলে যাবে। তাই প্রণয় সবকিছু ঠিক রাখতে বিষয়টা এখানেই শেষ করে ফেললো। চুপচাপ সহ্য করে নিল।
নবনীতা মাথা তুলে আর কারো দিকে তাকালো না। সবাই কেমন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে জেনো চোখ দিয়েই নিজেদের রা*গ প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নবনীতার তাতে কিছুই যায় আশে না, সে ভুল কিছু করেনি! ওর সাথে অ*সভ্যতামি করেছে বলেই ত সে থা*প্পড় মে*রেছে। কান্না পাচ্ছে ওর ভীষণ রকমের, সাথে রা*গও হচ্ছে ব্যাপক!ইচ্ছে হচ্ছে সামনে দাঁড়ানো এই ৬ফিট লম্বা লোকটার গালে আরও একটা বসিয়ে দিতে অ*সভ্য ছেলে।
রুপার মা ফিরে এসে বলে উঠলো, ' তুমি এখনো এই বাড়িতে আছো!.? লজ্জা সরম কিছু কি আছে.? তোমার জন্য আজ আমার মেয়ের কপাল পুড়তো। এটাই ত চেয়ে ছিলে তাই না.? বাপ-মার ত খবর নাই.. আর কিছু বলার আগেই নবনীতা ছলছল চোখে আশেপাশে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল টেনে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
পেছন থেকে ওর যাওয়ার দিকে রা*গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রণয় চৌধুরী। চোখ সরিয়ে আবার তাকালো রুপার মায়ের দিকে। মহিলাটা এখনো রা*গে ফুঁসফুঁস করছে।
পায়েলঃ ভাই তুমি এতো সহজে মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে!.?
প্রণয় চৌধুরী র*হস্যময় হাসি দিয়ে বোনের দিকে তাকালো।
পায়েলঃ না! না ভাইয়া একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবে না, মেয়েটা হয়তো বুঝতে পারেনি।
প্রণয় পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করে চোখে চশমা দিয়ে বললো,' আমি কি কিছু বলেছি!.? '
পায়েলঃ তুমি কিছু বলা লাগে না ভাই তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায়! রা*গে কেমন লাল হয়ে গেছে, চোখ গুলো রক্তবর্ণ হয়ে আছে,কপালের রগগুলো ফুলে গেছে।
প্রণয় পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাউকে কল দিল।
______________
বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুটা দূর আসতেই বৃষ্টি শুরু হলো। নবনী কাঁধের ব্যাগটা বু*কে চে*পে ধরে আশেপাশে তাকালো একটা চায়ের ছোট দোকান খোলা কিন্তু এখানে আশ্রয় নেওয়া যাবে না ইতিমধ্যে ওখানে দুইজন পুরুষ বসে আছে।
নবনী দ্রুত পা চালালো, রিক্সার জন্য আশেপাশে তাকাতেই পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠ বেসে আসলো।
নবনী অবাক হলো, কন্ঠটা ওর ভীষণ পরিচিত। পেছন ফিরে ফারাজ কে দেখে অবাক হয়ে বললো,' এখানে তুমি!.? '
ফারাজ ওর বাসার মালিকের ছোট ছেলে।
ফারাজ নবনীতার দিকে ছাতা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,' ভিজে যাচ্ছেন ছাতাটা ধরুন।'
নবনীতা প্রায় ভিজে গেছে। ছাতা না নিয়েই বললো,' আমি ঠিক আছি আর কিছু দূর বাড়িতে চলে এসেছি।'
ফারাজ নবনীতার হাতে ছাতা দিয়ে বললো,' শাড়ির আঁচল কিভাবে ছেড়ে গেল!.?'
নবনীতা অন্য সময় হলে দুইটা ধমক দিত এতোদিকে লক্ষ করার জন্য!
ফারাজ আবার বলে উঠলো, ' আজ ত আপনার বান্ধবীর বিয়ে আপনি চলে যাচ্ছেন!?'
নবনীতা ফারাজের দিকে একবার তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো। বৃষ্টির জন্য পুরো রাস্তা খালি। ফারাজ বৃষ্টিতে ভিজে নবনীতার সাথে সাথে পা ফেলে হাঁটছে।
নবনীতা ফারাজের দিকে তাকিয়ে বললো," তোমার ত বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে ফারাজ!"
ফারাজ মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ' তাহলে কি আপনার এক ছাতার নিচে আমার জায়গা হবে সিনিয়র আপু!.?'
নবনীতাঃ একদিন বৃষ্টিতে ভিজলে তেমন কিছু হয় না।
নবনীতার কথা শুনে শব্দ করে হেঁসে উঠলো ফারাজ। ছেলেটা ভীষণ চঞ্চল আর বেশি কথা বলে তবে মনের দিক থেকে ভালো।
___________
বিয়ে খুব জলদি শেষ হয়ে গেল।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ভেতর থেকে সবাই বউ বরণ করতে বেরিয়ে আসলো। খুব সুন্দর করে বউ ঘরে তুলে নিল নীলিমা বেগম।
প্রণয় বাড়িতে এসেই নিজের রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল।
এখনো নীলিমা বেগম ছেলের মাইর খাওয়ার কথা শুনেননি। শুনলে এতোক্ষণে ওই মেয়ের চোদ্দগুষ্টিকে পুলিশে দেওয়ার জন্য রেডি হতো।উনার ভীষণ আদরের ছেলে প্রণয়।
বাড়িতে সবাই এই বিষয়টা গোপন রাখলো।
রুপাকে রুমে দিয়ে গেল পায়েল। নীলিমা ত ছেলের বউ দেখে ভীষণ খুশি, চাঁদের মতো বউ। আমার প্রণয়ের জন্য এমন আরেকটা চাঁদ আনতে পারলে বাড়িটা আলোকিত হবে।
রাত দুইটায় আলভি রুমে আসলো।
রুমে এসে রুপার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে পড়েছে।
আলভি বারান্দায় গিয়ে কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভাইয়ের কথা রাখতে সে বিয়ে করেছে অথচ এখনো বউয়ের মুখও দেখেনি।
আলভি রুমে এসে লাইট জ্বেলে পাঞ্জাবি খুলবে তখনি রুপা চিৎ*কার করে বলে উঠলো,' আমি এই বিয়ে মানিনা! সব সময় আমার থেকে দূরে থাকবেন, যদি কখনো আমার কাছে আশার চেষ্টা করেন আপনার জীবন আমি তছনছ করে দিব! একদম বালিশ চাপা দিয়ে রাতে মে*রে ফেলবো! খাবারে বি*ষ মিশিয়ে খাইয়ে দিব।
সদ্য বিয়ে করা বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালো আলভি৷ বউ বেসে রুপাকে দেখেই বলে উঠলো " তুমি!"
রুপাও থমথমে মুখে বললো" আপনি!"
চলবে..
0 মন্তব্যসমূহ